বাংলা নাটক
সাহিত্যের একটি বিশাল জায়গা দখল করে আছে নাটক। যে নাটকসমূহ বাংলা ভাষায় লেখা হয় তাকে বাংলা নাটক বলা হয়। অভিনয়ের মাধ্যমে নাটক পরিবেশিত হতে হলে সাধারণত একটি লিখিত পান্ডুলিপি অনুসরন করা হয়ে থাকে। অভিনয় করার জন্যই প্রধানত নাটক লেখা হয়। নাটকে স্থান, কাল ও পরিবেশের বর্ণনা বিভিন্ন সংলাপের মাধ্যমে লেখা হয়। লিখিত সংলাপের উপর ভিত্তি করে একজন অভিনেতা/শিল্পী নাট্যমঞ্চে অভিনয় করেন। অভিনেতা/ শিল্পী বিভিন্ন সংলাপ/ বক্তব্যের মাধ্যমে তার মনোভাব ব্যাক্ত করে থাকেন। তবে, সংলাপই শেষ কথা নয়। সংলাপ ছাড়াও অভিনয়ও বাংলা নাটকের অংশ হতে পারে।
সংস্কৃত আলঙ্কারিকগণ নাট্য সাহিত্যকে কাব্য সাহিত্যের মাঝে স্থান দিয়েছেন। তাদের মতে কাব্য ০২ (দুই) প্রকার। যথাঃ ১। শ্রাব্য কাব্য ও ২। দৃশ্য কাব্য। নাটক প্রধানত দৃশ্য কাব্য এবং এটি সকল শ্রেণীর কাব্য সাহিত্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্থান দখল করে আছে। আমরা দেখে থাকি নাটকে অনেকসময় পাত্র-পাত্রীদের বক্তব্যে নাট্যকার নিজের ধ্যান-ধারণা সংযোগ করে থাকেন। এইজন্য এটি সম্পূর্ণরুপে বস্তুনিষ্ঠ বা তন্ময় বা অবজেক্টিভস্ নাও হতে পারে। কিন্তু একজন শ্রেষ্ঠ নাট্যকার নিজেকে যথাসাধ্য গোপনে রাখেন এবং তার চরিত্র সৃষ্টির মধ্যে একটি বিশেষ নির্লিপ্ততা বর্তমান রাখেন। নাটকের মাধ্যমে আমরা অনেক জ্ঞান অর্জণ করতে পারি।
নাটকের উপাদান
মূলভাবনা বা প্রেমিজঃ যেকোন নাটক তার শ্রোতা বা দর্শককে কিছু বলতে চায়। নাট্যকার একটি ধারণাকে কেন্দ্র করে একটি কাহিনী নির্মান করেন। কাহিনীর মাধ্যমে নাট্যকার তার নিজস্ব ধারনাকে প্রকাশ করেন। তার এই মূল বক্তব্যই হল মূল ভাবনা বা প্রেমিজ।
কাহিনী বা প্লটঃ নাটকে সাধারণত একটি কাহিনী বর্তমান থাকে। আর এই কাহিনীর মধ্যে অর্ন্তভূক্ত থাকে শুরু, মধ্য ও শেষ। এক বা একের অধিক মানব/ মানবির চরিত্র এখানে কাহিনী আকারে স্থান পায়। নাটকে প্রধান কাহিনীর পাশাপাশি উপ-কাহিনী বা সাব-প্লটও থাকতে পারে। এইসব উপকাহিনী মূল কাহিনীকে সহায়তা করে থাকে।
চরিত্রঃ একটি নাটক যেসব ব্যক্তির কহিনী বর্ণনা করে সেই ব্যক্তিগুলোই হল নাটকের চরিত্র। মূলত একটি নাটকে একটাই প্রধান চরিত্র খাকে। চরিত্রটির আচার আচরন শুরুতে যেরকম থাকে শেষ অবধি সেই রকম নাও থাকতে পারে। বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের প্রবাহে তার মধ্যে নানা পরিবর্তন ঘটে থাকতে পারে।
সংলাপঃ নাটকের পাত্র-পাত্রী বা অভিনেতা কথার মাধ্যমে যা প্রকাশ করে সেটাই সংলাপ। এককথায়, নাটকের চরিত্রের মুখের কথাগুলোকেই সংলাপ বলা হয়ে থাকে।
নাটকের শ্রেণীবিভাগ
কোন বিশেষ বিষয়কে কেন্দ্র করে বা ভিত্তি করে নাটকের শ্রেণীবিভাজন করা হয়না। নানারকম/ নানাধরণের বিষয়বস্তু অনুসরন করে নটককে নানাভাবে শ্রেণীবিভাজন করা হয়ে থাকে।
নাটকের শ্রেণীবিভাগগুলো যথাক্রমে-
(ক) ভাব সংবেদন রীতি অনুসারেঃ
১। মেলোড্রামা ২। ফার্স, ৩। ট্রাজেডি, ৪। কমেডি ও ৫। ট্রাজি-কমেডি।
(খ) বিষয়বস্তুর উৎস অনুসারেঃ
১। পৌরানিক, ২।সামাজিক, ৩। ঐতিহাসিক, ৪। ঐতিহাসিককল্প চরিত্রমূলক ও ৫। পরিবারিক।
(গ) বিষয়বস্তুর প্রকৃতি অনুসারেঃ
১। ধর্মমূলক, ২। নীতিমূলক, ৩। আধ্যাত্মিক, ৪। রাজনৈতিক, ৫। অর্থনৈতিক, ৬। প্রেমমূলক, ৭। দেশপ্রেমমূলক, ৮। সমাজরীতিমূলক, ৯। ষড়যন্ত্রমূলক, ১০। রোমাঞ্চকর দুঃসাহসমূলক ও ১১। অপরাধ আবিষ্কারমূলক প্রভৃতি।
(ঘ) উপাদান যোজনা বৈশিষ্ট্য অনুসারেঃ
১। গীতি নাট্য বা অপেরা, ২। নাটক বা ড্রামা, ৩। যাত্রা, ৩। নৃত্যনাট্য।
(ঙ) আয়তন বা অঙ্কসংখ্যা অনুসারেঃ
১। মহা নাটক, ২। নাটক, ৩।নাটিকা ও ৪। একাঙ্কিকা।
(চ) গঠনরীতি অনুসারেঃ
১। ক্লাসিক্যাল, ২। রোমান্টিক, ও ৩। দৃশ্যাবলী
(ছ) রচনারীতি অনুসারেঃ
১। গদ্য-পদ্যময় নাটক, ২। পদ্য নাটক ও ৩। গদ্য নাটক।
(জ) উপস্থাপনারীতি অনুসারেঃ
১। রুপক নাটক, ২। সাংকেতিক নাটক, ৩। বাস্তবিক নাটক, ৪। ভাবতান্ত্রিক নাটক ও ৫। এক্সপ্রেশানিষ্টিক নাটক।
(ঝ) উদ্দেশ্য অনুসারেঃ
১। রসমূখ্য (রসনাট্য) ২। তত্ত্বমূখ্য (তত্ত্ব নাটক), ৩। ঘটনামূখ্য (মেলোড্রামা) ও ৪। চরিত্রমূখ্য (চরিত্রনাট্য)।
বিভিন্ন শ্রেণীর বাংলা নাটক পড়তে/ ডাউনলোড করতে নিচের লিংকগুলো অনুসরন করুন।
০১। বাংলা নাটক-১